-->

শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২

সূরা আলাক্ব

সূরা আলাক্ব

 


সূরা আলাক্ব

আল আলাক্ব
سورة العلق
Sura96.pdf
শ্রেণীমক্কী সূরা
নামের অর্থঝুলে থাকা বস্তু,জোকের ন্যায় বস্তু,জমাট বাধা রক্ত
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম৯৬
আয়াতের সংখ্যা১৯
পারার ক্রম৩০
রুকুর সংখ্যা
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা ত্বীন
পরবর্তী সূরা →সূরা ক্বদর
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

আল আলাক্ব (আরবি ভাষায়: العلق) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ৯৬ তম সূরা। সূরা আলাক্বের আয়াত সংখ্যা ১৯। এতে একটি রূকু রয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময় ও স্থান[সম্পাদনা]

সূরা আলাক্ব মক্কায় অবতীর্ণ। এটি মক্কী সূরা হিসাবে পরিগণিত।

এই সূরাটির দুটি অংশ পরিলক্ষ্য করা যায়। প্রথম অংশটি প্রথম আয়াত থেকে শুরু হয়ে পঞ্চম আয়াত অবধি বিস্তৃত। অত:পর দ্বিতীয় অংশটি ষষ্ঠ আয়াত থেকে শুরু হয়ে সূরার শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯শ আয়াত অবধি বিস্তৃত। প্রথম অংশটি যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অবতীর্ণ সর্বপ্রথম অহী এ ব্যাপারে উম্মাতে মুসলিমার আলেম সমাজের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ একমত। এ প্রসংগে ইমাম আহমাদ, বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ অসংখ্য সনদের মাধ্যমে হযরত আয়েশা (রা:) থেকে যে হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন তা সর্বাধিক সহীহ হাদীস হিসেবে গণ্য। এ হাদীসে হযরত আয়েশা (রা:) নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ওহী শুরু হবার সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও ইবনে আব্বাস (রা:),আবু মূসা আশ’আরী (রা:) ও সাহাবীগণের একটি দলও একথা বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর সর্বপ্রথম কুরআনের এই আয়াতগুলোই নাযিল হয়েছিল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হারম শরীফে নামায পড়া শুরু করেন এবং আবু জেহেল তাকে হুমকি দিয়ে তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে তখন দ্বিতীয় অংশটি নাযিল হয়।





শানে নুযূল ও বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

এই সূরাটির দু’টি অংশের প্রথম অংশটি প্রথম আয়াত থেকে শুরু হয়ে পঞ্চম আয়াত অবধি বিস্তৃত। এই অংশটিই সর্বপ্রথম অহী যা নবী -এর উপর ঐ সময় অবতীর্ণ হয় যখন তিনি হেরা গুহায় আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। আল্লাহর ফিরিশতা জিবরীল (আ:) তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘পড়ুন।’ তিনি বললেন, ‘আমি তো পড়তে জানি না।’ অত:পর ফিরিশতা তাকে জড়িয়ে ধরে শক্তভাবে চেপে ধরলেন এবং বললেন, ‘পড়ুন।’ তিনি পুনর্বার একই উত্তর দিলেন। এইভাবে ফিরিশতা তিনবার করলেন। এরপর রাসুলল্লাহ (সা:) পড়তে শুরু করেন।

এখানে সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে বিশেষ করে মানুষের জন্মের কথা উল্লেখ হয়েছে; যেখানে মানুষের মর্যাদা স্পষ্ট। ৩য় আয়াতে, বাক্যটি তাকীদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, এ দ্বারা বড় অলঙ্কারপূর্ণ ভঙ্গিমায় নবী এর ওযরের জওয়াব দেওয়া হয়েছে, যা তিনি "আমি পড়তে জানি না" বলে পেশ করেছিলেন। আল্লাহ বললেন, আল্লাহ মহামহিমান্বিত; তুমি পড়। অর্থাৎ, মানুষের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করা তার বিশেষ গুণ
ইলম (জ্ঞান) ও তার বিকাশের কথা এসেছে। কিছু ইলম (জ্ঞান) মানুষের স্মৃতিতে থাকে, কিছু আবার জিহবা দ্বারা প্রকাশ করা হয়, আর কিছু ইলম মানুষ কলম দ্বারা কাগজে লিখে হিফাযত করে থাকে। মস্তিষ্ক ও স্মৃতিতে যা থাকে তা মানুষের সাথে চলে যায়। জিহ্বা দ্বারা যা প্রকাশ করা হয়, তাও সংরক্ষিত।

এই সূরাটির দু’টি অংশের দ্বিতীয় অংশটি ষষ্ঠ আয়াত থেকে শুরু হয়ে উনিশ আয়াত অবধি বিস্তৃত।
হাদীসে এসেছে যে, একদা নবী কা’বাগৃহের পাশে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় আবু জাহল তাঁর পাশ দিয়ে পার হয়ে বলল, ‘ওহে মুহাম্মাদ! আমি কি তোমাকে নামায পড়া হতে নিষেধ করিনি?’ অনুরূপ সে আরো তার সাথে কঠিনভাবে ধমক দিয়ে কথা বলল। নবী তার কথার কড়া জওয়াব দিলেন। তখন সে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! তুমি আমাকে কিসের ভয় দেখাচ্ছ? আল্লাহর কসম! এই উপত্যকায় সব থেকে আমার পারিষদ ও পৃষ্ঠপোষক বেশি আছে।’ তখন এই আয়াত নাযিল হয়।
ইবনে আব্বাস বলেন, যদি আবু জাহল নিজের পারিষদবর্গকে আহবান করত, তাহলে তাদেরকে তখনই শাস্তিদাতা ফিরিশতাগণ পাকড়াও করতেন। (তিরমিযী, তাফসীর সূরা ইকরা পরিচ্ছেদ, মুসনাদে আহমাদ ১/৩২৯ ও তাফসীর ইবনে জারীর)
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এইভাবে রয়েছে যে, সে অগ্রসর হয়ে তার গর্দানে পা রাখার মনস্থ করেছিল। ইতি অবসরে সে উল্টা পা ফিরে গেল এবং নিজ হাত দ্বারা নিজেকে বাঁচাতে লাগল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কি ব্যাপার? সে বলল, ‘আমার ও মুহাম্মাদের মাঝে আগুনের পরিখা, ভয়ংকর দৃশ্য এবং বহু পাখা দেখলাম!’ রসূল বললেন, "যদি সে আমার নিকটবর্তী হত, তাহলে ফিরিশতাগণ তার এক একটা অঙ্গকে নুচে নিত।"
الزَّبَانِية শব্দের অর্থ হল দারোগা এবং পুলিশ (বা প্রহরী)। অর্থাৎ, এমন শক্তিশালী সৈন্য যার কেউ মুকাবিলা করতে পারে না।[১]

অহির সূচনা[সম্পাদনা]

মুহাদ্দিসগণ অহীর সূচনাপর্বের ঘটনা নিজের সনদের মাধ্যমে ইমাম যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম যুহরী এ ঘটনা হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর থেকে এবং তিনি নিজের খালা হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আয়েশা (রা:) বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অহীর সূচনা হয় সত্য স্বপ্নের (কোন কোন বর্ণনা অনুসারে ভালো স্বপ্নের) মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন, মনে হতো যেন দিনের আলোয় তিনি তা দেখছেন। এরপর তিনি নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়েন। এরপর কয়েকদিন হেরা গুহায় অবস্থান করে দিনরাত ইবাদাতের মধ্যে কাটিয়ে দিতে থাকেন। ঘর থেকে খাবার-দাবার নিয়ে তিনি কয়েকদিন সেখানে কাটাতেন। তারপর হযরত খাদীজার (রা:)কাছে ফিরে আসতেন। তিনি আবার কয়েক দিনের খাবার সামগ্রী তাকে যোগাড় করে দিতেন।

একদিন তিনি হেরা গুহার মধ্যে ছিলেন। হঠাৎ তার ওপর ওহী নাযিল হলো। ফেরেশতা এসে তাকে বললেন :“ পড়ুন ” এর পর হযরত আয়েশা (রা)নিজেই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন :আমি বললাম, “আমি তো পড়তে জানি না। ”একথায় ফেরেশতা আমাকে ধরে বুকের সাথে ভয়ানক জোরে চেপে ধরলেন। এমনকি আমি তা সহ্য করার শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেল্লাম । তখন তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন , “পড়ো ” আমি বলালাম “আমি তো ,পড়তে জানি না। ”তিনি দ্বিতীয় বার আমাকে বুকের সাথে ধরে ভয়ানক চাপ দিলেন। আমার সহ্য করার শক্তি প্রায় শেষ হতে লাগলো।তখন তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ো ”আমি আবার বলালাম ,“আমি তো পড়া জানি না । ”তিনি তৃতীয় বার আমাকে বুকের সাথে ভয়ানক জোরে চেপে ধরলেন আমার সহ্য করার শক্তি খতম হবার উপক্রম হলো।তখন তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন ,(আররবী- اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ ) (পড়ো নিজের রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন ) এখানে থেকে (আরবী -عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ) (যা সে জানতো না ) পর্যন্ত । হযরত আয়েশা (রা ) বলেন ,এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাঁপতে কাঁপতে সেখান থেকে ফিরলেন । তিনি হযরত খাদীজার (রা ) কাছে ফিরে এসে বললেন, আমার গায়ে কিছু (চাঁদর - কম্বল ) জড়িয়ে দাও ! আমার গায়ে কিছু ( চাঁদর - কম্বল ) জড়িয়ে দাও ! তখন তাঁর গায়ে জড়িয়ে দেয়া হলো।তাঁর মধ্য থেকে ভীতির ভাব দূর গেলে তিনি বললেন :“হে খাদীজা ! আমার কি হয়ে গেলো ? তারপর তিনি তাঁকে পুরো ঘটনা শুনিয়ে দিলেন এবং বললেন ,আমান নিজের জানের ভয় হচ্ছে। ”হযরত খাদীজা বললেন : “মোটেই না ।বরং খুশি হয়ে যান।আল্লাহর কসম !আল্লাহ কখনো আপনাকে অপমাণিত করবেন না। আপনি আত্মীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করেন । সত্য কথা বলেন। (একটি বর্ণনায় বাড়তি বলা হয়েছে ,আপনি আমানত পরিশোধ করে দেন , ) অসহায় লোকদের বোঝা বহন করেন । নিজে অর্থ উপার্জন করে অভাবীদেরকে দেন। মেহমানদারী করেন। ভালো কাজে সাহায্য করেন।”তারপর তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাথে নিয়ে ওয়ারাকা ইবনে নওফলের কাছে গেলেন। ওয়ারাকা ছিলেন তাঁর চাচাত ভাই । জাহেলী যুগে তিনি ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।আরবী ও ইবরানী ভাষায় ইঞ্জিল লিখতেন। অত্যন্ত বৃদ্ধ ও অন্ধ হয়ে পড়েছিলেন। হযরত খাদীজা (রা ) তাঁকে বললেন ভাইজান !আপনার ভাতিজার ঘটনাটা একটু শুনুন। ওয়ারাকা রসূলুল্লাহকে (রা )বললেন :“ভাবিজা !তুমি কি দেখেছো ?” রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু দেখেছিলেন তা বর্ণনা করছেন। ওয়ারাকা বললেন: “ইনি সেই নামূস (অহী বহনকারী ফেরেশতা ) যাকে আল্লাহ মূসার (আ ) ওপর নাযিল করেছিলেন ।হায় ,যদি আমি আপনার নবুওয়াতের জামানায় শক্তিশালী যুবক হতাম ! হায়, যদি আমি তখন জীবিত থাকি যখন আপনার কওম আপনাকে বের করে দেবে ।” রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :“এরা আমাকে বের করে দেবে ? ”ওয়ারাকা বললেন :“হাঁ, কখনো এমনটি হয়নি ,আপনি যা নিয়ে এসেছেন কোন ব্যক্তি তা নিয়ে এসেছে এবং তার সাথে শত্রুতা করা হয়নি ।যদি আমি আপনার সেই আমলে বেঁচে থাকি তাহলে আপনাকে সর্বশক্তি দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করবো ।” কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই ওয়ারাকা মৃত্যুবরণ করেন।

আয়াত- আরবী ও বাংলা[সম্পাদনা]

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতীব দয়ালু।

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ

১) পড়ো (হে নবী), তোমার রবের নামে ৷  যিনি সৃষ্টি করেছেন৷

خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ

২) জমাট বাঁধা রক্তের দলা থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন৷

اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ

৩) পড়ো, এবং তোমার রব বড় মেহেরবান,  

الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ

৪) যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন৷

عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ

৫) মানুষকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন, যা সে জানতো না৷

كَلَّا إِنَّ الْإِنسَانَ لَيَطْغَىٰ

৬) কখনই নয়, মানুষ সীমা লঙ্ঘন করে৷ 

أَن رَّآهُ اسْتَغْنَىٰ

৭) কারণ সে নিজেকে দেখে অভাবমুক্ত৷ 

إِنَّ إِلَىٰ رَبِّكَ الرُّجْعَىٰ

৮) (অথচ) নিশ্চিতভাবেই তোমার রবের দিকেই প্রত্যাবর্ন করতে হবে

أَرَأَيْتَ الَّذِي يَنْهَىٰ

৯) তুমি কি দেখেছো সেই ব্যক্তিকে  

عَبْدًا إِذَا صَلَّىٰ

১০) যে এক বান্দাকে নিষেধ করে যখন সে নামায পড়ে৷

أَرَأَيْتَ إِن كَانَ عَلَى الْهُدَىٰ

১১) তুমি কি মনে করো, যদি (সেই বান্দা) সঠিক পথে থাকে  

أَوْ أَمَرَ بِالتَّقْوَىٰ

১২) অথবা তাকওয়ার নির্দেশ দেয়?  

أَرَأَيْتَ إِن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ

১৩) তুমি কি মনে করো, যদি (এই নিষেধকারী সত্যের প্রতি) মিথ্যা আরোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়?  

أَلَمْ يَعْلَم بِأَنَّ اللَّهَ يَرَىٰ

১৪) সে কি জানে না, আল্লাহ দেখছেন?

كَلَّا لَئِن لَّمْ يَنتَهِ لَنَسْفَعًا بِالنَّاصِيَةِ

১৫) কখনই নয়, যদি সে বিরত না হয় তাহলে আমি তার কপালের দিকে চুল ধরে তাকে টানবো, 

نَاصِيَةٍ كَاذِبَةٍ خَاطِئَةٍ

১৬) সেই কপালের চুল (ওয়ালা) যে মিথ্যুক ও কঠিন অপরাধকারী৷

فَلْيَدْعُ نَادِيَهُ

১৭) সে তার সমর্থক দলকে ডেকে নিক

سَنَدْعُ الزَّبَانِيَةَ

১৮) আমি ডেকে নিই আযাবের ফেরেশতাদেরকে ৷

كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِب ۩

১৯) কখনই নয়, তার কথা মেনে নিয়ো না, তুমি সিজদা করো এবং (তোমার রবের) নৈকট্য অর্জন করো৷

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]


সূরা নাস

সূরা নাস

 

সূরা নাস


আন-নাস
الناس
Sura114.pdf
শ্রেণীমাদানী সূরা
নামের অর্থমানবজাতি
অন্য নামমানুষ
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম১১৪
আয়াতের সংখ্যা
পারার ক্রম৩০ পারা
রুকুর সংখ্যা
সিজদাহ্‌র সংখ্যানেই
শব্দের সংখ্যা২০
অক্ষরের সংখ্যা৮০
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা ফালাক
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

সূরা আন-নাস (আরবিسورة الناس‎‎; মানবজাতিমুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১৪ তম এবং সর্বশেষ সূরা; এর আয়াত, অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৬ এবং রূকু, তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১। সূরা আন-নাস মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে; যদিও কোন কোন বর্ণনায় একে মক্কায় অবতীর্ণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[১] এর ছয় আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য সংক্ষেপে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করা হয়। এই সূরাটি এবং এর পূর্ববর্তী সূরা আল-ফালাককে একত্রে মু'আওবিযাতাইন (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু'টি সূরা) নামে উল্লেখ করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় বা ঘুমের আগে এই সূরাটি পড়া একটি ঐতিহ্যগত সুন্নত[২]

নামকরণ[সম্পাদনা]

সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস আলাদা আলাদা সূরা হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ও উভয়ের বিষয়বস্তু পরস্পরের সাথে এত বেশি নিকট সম্পর্কিত যে এদেরকে একত্রে “মু’আওবিযাতাইন” (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু’টি সূরা) নামে ডাকা হয়; আর এই সূরা দু’টি নাযিলও হয়েছে একই সাথে একই ঘটনার পরি-প্রেক্ষিতে।[৩][৪][৫]

শানে নুযূল[সম্পাদনা]

সূরা ফালাক ও পরবর্তী সূরা আন নাস একই সাথে একই ঘটনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, জনৈক ইহু্দী রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)- এর উপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহু্দী জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রসূলুল্লাহ্‌ লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরু ছিল। তিনি এই সূরা দুটি পড়ে ফুক দেওয়ায় গিরুগুলো সাথে সাথে খুলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন।[৬]

হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ্‌ - এর উপর জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হযরত আয়েশা -কে বললেনঃ আমার রোগটা কি, আল্লাহ্ তা'আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ কে জাদু করেছে? উত্তর হল, ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক লবীদ ইবনে আ'সাম জাদু করেছে। আবার প্রশ্ন হলঃ কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে 'বির যরোয়ান' কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ তিনি কূপে গেলেন এবং বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন।[৭]

আয়াতসমূহ ও অর্থ[সম্পাদনা]

بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝‎
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।
  1. قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ ۝
    ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
    বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার
  2. مَلِكِ ٱلنَّاسِ ۝
    মালিকিন্নাস।
    মানুষের অধিপতির।
  3. إِلَـٰهِ ٱلنَّاسِ ۝
    ইলাহিন্নাস।
    মানুষের মা'বুদের।
  4. مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ۝
    মিন শাররীল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস।
    তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে।
  5. الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ ۝
    আল্লাযি ইউওয়াস ইসু ফী সুদুরিন্নাস।
    যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।
  6. مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ ۝ ‎
    মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।
    জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
আরবি ভাষায়উচ্চারণবাংলায় অনুবাদ
বিস্‌মিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহীম

قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ
مَلِكِ ٱلنَّاسِ
إِلَـٰهِ ٱلنَّاسِ
مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ
مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ

ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
মালিকিন্নাস।
ইলাহিন্নাস।
মিন শাররীল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস।
আল্লাযি ইউওয়াস ইসু ফী সুদুরিন্নাস।
মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।

বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার।
মানুষের অধিপতির,
মানুষের মা' বুদের,
তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে,
যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে,
জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

হাদিস[সম্পাদনা]

অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। - (আবু দাউদ, নাসায়ী)

- (মাযহারী)[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1.  মওদুদী, সাইয়েদ আবুল আ'লা (১৯৭২)। তাফহীমুল কুরআন
  2.  ইমাম বুখারী। সহীহ আল-বুখারী। পৃষ্ঠা ৫০১৭ নং হাদীস।
  3.  শাফী', মুহাম্মদ (১৯৯১)। তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন। খাদেমুল-হারামাইন বাদশাহ ফাহদ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প, মদীনা মোনাওয়ারা, সৌদী আরব।
  4.  বায়হাকী, ইমাম (১৯৯০)। দালায়েলে নবুওয়াত
  5.  "সূরার নামকরণ"। www.banglatafheem.com। তাফহীমুল কোরআন, ২০ অক্টোবর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6.  তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন (১১ খন্ডের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা)।
  7.  সহীহ্‌ বোখারী শরীফ।
  8.  মারেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা নং ১৪৮৩।
  9.  মারেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা নং ১৪৮৪-৮৫