-->

শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
Written version of the Basmala
ক্যালিগ্রাফিক অক্ষরে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (আরবি'بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ‎‎) একটি আরবি বাক্যবন্ধ যার অর্থ "পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে"। সংক্ষেপে বলা হয় বিসমিল্লাহ্‌। পবিত্র কুরআন শরীফের ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা তওবা ব্যতিরেকে অন্য বাকি ১১৩টি সূরা শুরু করা হয়েছে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" দিয়ে। এছাড়া হাদিস থেকে জানা যায়, ইসলামের নবি মুহাম্মাদ প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" বলতেন।[১] অনেক কাজে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" বলা বা লেখার নির্দেশনা রয়েছে। বিধানগত বিচারে এটা মাসনূন বা মুস্তাহাব হলেও এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর।[২]

মূলবাক্য[সম্পাদনা]

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি(র) রাহমানি(র) রাহিমি
"পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।"

তাৎপর্য[সম্পাদনা]

White-on-black rendering of the Basmala in the shape of a pear
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম একটি নাশপাতি আকৃতির শৈল্পিক গঠন

তাফসির-ই-ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে, ‘উসমান বিন আফফান মুহাম্মাদকে ‘বিসমিল্লাহ’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন,

"এতে আল্লাহ তায়ালার নাম। আল্লাহর বড় নাম এবং এই বিসমিল্লাহর মধ্যে এতদূর নৈকট্য রয়েছে যেমন রয়েছে চুর কালো অংশ ও সাদা অংশের মধ্যে।"

ইবনে মরদুওয়াইর তাফসিরে রয়েছে,মুহাম্মাদ বলেছেন,

"আমার ওপর এমন একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যার মতো আয়াত হজরত সুলায়মান (আঃ) ছাড়া অন্য কোনো নবীর ওপর অবতীর্ণ হয়নি। আয়াতটি হলো, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’।"

জাবির বর্ণনা করেন,

যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন পূর্ব দিকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়, বায়ুমণ্ডলী স্তব্ধ হয়ে যায়, তরঙ্গ বিুব্ধ সমুদ্র প্রশান্ত হয়ে ওঠে, জন্তুগুলো কান লাগিয়ে শয়তানকে বিতাড়ন করে এবং বিশ্বপ্রভু স্বীয় সম্মান ও মর্যাদার কসম করে বলেন, ‘যে জিনিসের ওপর আমার এ নাম নেয়া যাবে তাতে অবশ্যই বরকত হবে। (তাফসির ইবনে কাসির)[৩]

গুরুত্ব[সম্পাদনা]

আয়িশা বলেন,

রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, "যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি খাদ্য খাবে সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তাহলে সে যেন বলে, বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু"। (আবু দাউদ হা-৩৭৬৭, ইবনু মাজাহ হা-৩২৬৪)।[৩]

ইসলামে বিসমিল্লাহর গুরুত্ব ও বরকত অপরিসীম। বিসমিল্লাহ না বলার কারণে একটি হালাল খাদ্য হারাম হয়ে যেতে পারে, আবার বিসমিল্লাহ না বলার কারণে নিয়ত শুভ থাকলেও অনেক কর্মে বরকত না হওয়ায অনেকসময় ব্যাক্তির অসন্মানিত হতে হয়। কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হলে সে কাজে আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতারিত হতে থাকে। শয়তান সেখানে অবস্থান নিতে পারে না। মুহাম্মদের (সা.) কাছে প্রথম ওহী অবতরণের সময়ও এই বাক্য পড়ানো হয়েছিল।[৩]

শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার দোয়া[সম্পাদনা]

একটি ব্যক্তিগত চিঠিতে বিসমিল্লাহ। ১০-১১ শতাব্দী

মুসলিমরা বিসমিল্লাহ দিয়েই সব কাজ শুরু করতে হয়। তারা মনে করে, কাজ ও কথার শুরুতেই বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে,

যে কাজ বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা না হয় তা কল্যাণহীন ও বরকতশূন্য থাকে। এর মাধ্যমে কাজের শুরুতে আল্লাহর আনুগত্য করা হয় এবং মানুষের অমতা ও বিনয় ভাব প্রকাশ পায়। এ বাক্যের মাধ্যমে কর্ম শুরু করলে শয়তানের অসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকা যায়।[৩]

বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করলে আল্লাহ তাকে করুণা করেন, হেফাজতে রাখেন ও কাজে বরকত দান করেন। আনাস বলেন, {{রাসূলুল্লাহ বলেছেন, "যদি কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহের নামে বের হলাম, আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম, আমার কোনো উপায় নেই, কোন ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া’ তখন তাকে বলা হয় তুমি পথ পেলে, উপায় পেলে ও সহায়তা পেলে। তারপর শয়তান তার থেকে দূর হয়ে যায়। তখন আর এক শয়তান এ শয়তানকে বলে, তুমি লোকটিকে কেমন পেলে? তখন সে বলে, তাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, পথ দেয়া হয়েছে ও রা করা হয়েছে’ (মিশকাত হা-২৪৪৩)[৩]"}}

সুসার বু-ফাতাতা মসজিদের ভিত্তি শিলালিপির শুরুতে বিসমিল্লাহ্‌। ৯ম শতাব্দী

হুজায়ফা বলেন,

নবী করীম (সা) বলেছেন, "শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না।" (মুসলিম হা-২০১৭, আবু দাউদ হা-৩৭৬৬)

জাবির বলেন,

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, "বিসমিল্লাহ বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ করো। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। বিসমিল্লাহ বলে বাতি নিভিয়ে দাও। একটু কাঠখড়ি হলেও আড়াআড়ি ভাবে বিসমিল্লাহ বলে পাত্রের মুখ ঢেকে রাখো। বিসমিল্লাহ বলে পানির পাত্র ঢেকে রাখো।" (বুখারি হা-৩২৮০, মুসলিম হা-২০১২, আবু দাউদ হা-৩৭৩১, তিরমিজি হা-২৮৫৭)[৩]

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস বলেন,

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে, সে বলবে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবিনাশ শায়তানা অজান্নিবিশ শায়তানা মা রাজাকতানা’ অর্থাৎ আল্লাহর নামে মিলন শুরু করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখো এবং শয়তানকে দূরে রাখো, আমাদের মাঝে কোনো সন্তান নির্ধারণ করলে শয়তান কখনো তার কোনো তি করতে পারবে না।’ (বুখারি হা-১৪৩৪, আবু দাউদ হা-২১৬১, তিরমিজি হা-১০৯২, ইবনু মাজাহ হা-১৯১৯)।[৩]

প্রথম সূরা[সম্পাদনা]

নাস্তালিক লিপিতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস বলেন,

জিবরাইল (আ:) সর্বপ্রথম মুহাম্মাদ-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাইল (আ:) বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় চান। মুহাম্মাদ বললেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর জিবরাইল (আ:) বললেন, হে নবী! আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। অতঃপর জিবরাঈল (আ:) বললেন, ইকরা' বিসমি… অর্থাৎ আপনি পড়–ন, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা:) বলেন,

এটাই প্রথম সূরা, যা আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল (আ:) এর মাধ্যমে মুহাম্মাদের প্রতি অবতীর্ণ করেন।’ ( তাবারি, তাফসির ইবনু কাসির হা-২৬৩)[৩]

সূচনাবাক্য[সম্পাদনা]

‘বিসমিল্লাহ’ হলো সব কাজের সূচনাবাক্য। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের শুরুতেও বিসমিল্লাহ বলা হয়। বিসমিল্লাহ দিয়েই অধিকাংশ সূরা শুরু করা হয়েছে। মুসলিমরা আল্লাহর নির্দেশিত ও ইসলামি বিধান মতে সমর্থিত কাজ শুরুর প্রাক্কালেই ‘বিসমিল্লাহ’ বলে থাকে। কিন্তু অন্যায় কাজ ও ইসলামবহির্ভূত কর্মের জন্য ‘বিসমিল্লাহ’ বলা আল্লাহদ্রোহিতার অন্তর্ভুক্ত। [৩]

মুহাম্মাদ বলেছেন

"প্রত্যেক ভালো কাজের শুরুতে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলা না হয় তা হলে তা অসম্পূর্ণ ও নিম্নমানের থেকে যায়।’ (আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ)।"[৩]

ক্যালিগ্রাফিতে বিসমিল্লাহ[সম্পাদনা]

ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম প্রচুর লেখা হয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

Tags :

bm

Welftion.blog

Seo Construction

I like to make cool and creative designs. My design stash is always full of refreshing ideas. Feel free to take a look around my Vcard.

  • Welftion.blog
  • February 04
  • 145/7 Welftion Office Road,Welftion City,Muslim kingdom
  • contact@welftion.com
  • +8809638608760

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ওয়েলফশন মানবকল্যাণ সংঘ যা বিশ্বের কল্যাণকামী মানুষের সম্মিলিত সংগঠন।
যার লক্ষ্য কল্যাণকামীদের একত্রিত করা,শিক্ষা অনুরাগী, কল্যাণ অনুরাগী, জ্ঞান অনুরাগী এবং কল্যাণের জন্য একতাবদ্ধ হতে আকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে একতাবদ্ধ হয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করে, সুন্দর সমাজ গড়া। শিক্ষা সচেতনতার প্রচার করা। বিশ্বে শিক্ষা, সততা ও কল্যাণের প্রসার এবং উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানো ওয়েলফশনের প্রধান লক্ষ ।
Welfare,Education,Lead,Friend,Truth,Indagator,Organization,Necessary
WELFTION