-->

শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২

লূত (ইসলাম)

লূত (ইসলাম)

লূত (ইসলাম)

নবী
হজরত

লূত়
لوط
লোট

আলাইহিস সালাম
Lut, prophet (calligraphic, transparent background).png
জন্ম
মৃত্যু
অন্যান্য নামলোট (হিব্রু ভাষায়לוֹט‎‎)
লূত বিন হারান (আরবিلوط بن هاران‎‎)
দাম্পত্য সঙ্গীলূতের স্ত্রী
সন্তানলূতের কন্যাগণ
পিতা-মাতাহারান (পিতা)
আত্মীয়ইব্রাহিম (চাচা)

লুত ইবনে হারান ( لوط, Lūṭ ), যিনি সচরাচর হযরত লুত নামে অভিহিত, বাইবেল এবং কুরআনে উল্লেখিত আল্লাহ প্রেরিত একজন পয়গম্বর যাকে সদোম ও গোমোরাহ নামক শহরদ্বয়ের অধিবাসীদের নবী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।[১][২] তিনি ছিলেন নবী ইব্রাহীমের আপন ভাতিজা।[৩] ইব্রাহীমের সঙ্গে তিনি কেনানে চলে আসেন। সেখানেই তার উপর নবুয়াতের দায়িত্ব অবতীর্ণ হয়। [৪]পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবীর মধ্যে ইসলামের একজন নবী যাকে সমকামিতায় লিপ্ত থাকা স্বীয় জাতির সতর্ককারী হিসেবে আল্লাহ তাআলা নিয়োজিত করেছিলেন। সমকামিতা ত্যাগ না করায় তারা আল্লাহর আযাবে সমূলে ধ্বংস হয়েছিলো।

কুরআনের বর্ণনানুসারে লুত এবং তার সম্প্রদায়ের কাহিনী[সম্পাদনা]

পবিত্র কুরআনে ১৫,২৬,২৯ এবং ৬৬ নম্বর সূরাসমূহের বিভিন্ন অংশে লুত এর কাহিনী বর্ণনা করেন। লুত এর জাতি পার্থিব উন্নতির চরম উৎকর্ষে পৌছে যাওয়ার কারণে বিলাসিতার অতিশয্যে সীমালঙ্ঘনের দিক দিয়ে তাদের পূর্বের গযবপ্রাপ্ত জাতিগুলোকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। লুত এর জাতি ব্যভিচার ও অজাচার তো করতোই, তার উপর সমকামিতার মত চরম সীমালঙ্ঘনও তারাই প্রথম শুরু করে, যা তাদের পূর্বে কেউ কখনো করে নি; উপরন্তু, তারা এর ফলে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত না হয়ে গর্ব ভরে তা সমাজে প্রকাশ করে বেড়াত এবং প্রকাশ্যে ও নির্লজ্জভাবে এসব নিষিদ্ধ কাজগুলো করত। আল্লাহতাআলা তাই লুত কে তার জাতির জন্যে সতর্ককারী নবী মনোনীত করলেন এবং আল্লাহকে ভয় করে তাদের এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলার নির্দেশ দিলেন। লুত দীর্ঘ সময় ধরে সতর্ক করার পরও যখন তাদের পরিবর্তন হল না তখন আল্লাহ তাআলা চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মাধ্যমে সমগ্র এলাকা উলটিয়ে দেন, আকাশ থেকে একাধারে বৃষ্টি ও পাথর বর্ষণ করে সমগ্র জাতিকে সমুলে নিশ্চিহ্ন করে দেন। বর্ণিত আছে, বর্তমান মৃত সাগর বা ডেড সি হল লুত এর জাতির সেই বাসস্থান যেখানে তাদের ধ্বংস করা হয়েছিলো।

লুত -এর স্ত্রী‘র অবস্থা[সম্পাদনা]

লূত এর স্ত্রী কুরআনে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বর্নিত হয়েছে। কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী সডোম ও গোমরাহ অঞ্চলের অধিবাসীদের সঙ্গে তার মৃত্যু হয়।

বাইবেল-এর বর্ণনানুসারে লূত-এর কাহিনী[সম্পাদনা]

বাইবেলেও লুতের কাহিনী পাওয়া যায়।[৫] তবে জেনেসিস, ১৯ অধ্যায় (আয়াত ৪ - ৯) এর অতিরিক্ত কিছু কাহিনী (তার কন্যাদের সংশ্লিষ্ট) নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রের (অর্থাৎ বাইবেলের তথা জেনেসিসের নির্ভেজাল সংস্করণ) অভাবে বিতর্কিত হয়ে আছে। তাই লভ্য বাইবেলের (জেনেসিস, ১৯ অধ্যায়) বর্ণনা ইসলামে সর্বাংশে গ্রহণ করা হয়নি।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]


 

ইব্রাহিম (নবী)

ইব্রাহিম (নবী)

 


ইব্রাহিম (নবী)

নবি

ʾইব্রাহিম
إِبْرَاهِيْمُ
অব্রাহাম

আলাইহিস সালাম
Ibrahim (Abraham)1.png
জন্ম
মৃত্যু
সমাধিইব্রাহিমী মসজিদহিব্রোণ
অন্যান্য নামখলিলুল্লাহ (আরবিخَلِيْلُ ٱللهِ‎‎, “আল্লাহর বন্ধু”)
অব্রাহাম (হিব্রু ভাষায়אַבְרָהָם‎)
উত্তরসূরীলূত (সম্ভবত)
দাম্পত্য সঙ্গীহাজেরা (হাগার), সারাকটূরা
সন্তানইসমাইল (ইশ্মায়েল), ইসহাক (ইস্‌হাক) ও অন্যান্য
পিতা-মাতাতেরহ বা আজার
আত্মীয়লূত (ভাতিজা)

ইব্রাহিম বা ইব্রাহীম সম্মানার্থে হযরত ইব্রাহিম (আ.) (আরবিابراهيم‎‎, হিব্রু ভাষায়אַבְרָהָם‎) তোরাহ অনুসারে ইব্রাহিম (আ.) (ইংরেজিAbraham) (আনুমানিক জন্ম: অজানা হযরত ইবরাহীম (আ.) পশ্চিম ইরাকের বসরা নিকটবর্তী ‘বাবেল’ শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি ইসলাম ধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী ও রাসূল[১][২] পবিত্র কুরআনে তার নামে একটি সূরাও রয়েছে। পুরো কুরআনে অনেকবার তার নাম উল্লেখিত হয়েছে। ইসলাম ধর্মমতে, তিনি মুসলিম জাতির পিতা। ইসলাম ছাড়াও, ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মেও ইব্রাহিম শ্রদ্ধাস্পদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। এজন্য ইবরাহিমকে (আ.) একই সাথে বহু ধর্মের জনক।[৩]। সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার দৃঢ় বিশ্বাসের ছিলো [৪] ইসলামে তার কার্যক্রম কে স্মরণ করে ঈদুল আযহা পালিত হয়। ইব্রাহিম(আ.) ও তার শিশুপুত্র ইসমাইল(আ.) ইসলামে কুরবানি[৫] ও হজ্জের বিধান চালু করেন যা বর্তমানের মুসলিমদের দ্বারাও পালিত হয়।

ইব্রাহীম একজন অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব কারণ তাকে কুরআনে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, খুব ছোট থেকেই আল্লাহকে বোঝার চেষ্টা করতে এবং ঈশ্বরকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করতে সমস্যা হয়েছিল; অস্থির হওয়া, এটা জেনে যে, সম্ভবত তিনি যে পৌত্তলিক পরিবেশে ছিলেন তার উত্তর ছিল না। যে, শেষ পর্যন্ত, ঈশ্বর নক্ষত্র বা সূর্য বা বাতাস বা চাঁদ ছিলেন না - এই সমস্ত শক্তি যা তিনি দেখেছিলেন - ঈশ্বর অন্য কিছুতে ছিলেন।

জন্ম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

তার পিতার নাম আজর। তার স্ত্রীর নাম হাজেরা ও সারাহ। তার দুই পুত্র ছিলেন: ইসমাইল (ইংরেজিIshmael), ইসহাক (ইংরেজিIsaac)। মতান্তরে, তাঁর তৃতীয় স্ত্রী কান্তুরাহের গর্বে আরো ৬ জন পুত্র ছিলেন।[৬] তবে, পুত্র হিসেবে কেবল ইসমাইল ও ইসহাকের বর্ণনাটিই ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। অন্যদের ব্যাপারে ঐতিহাসিক উল্লেখের তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, যার ব্যতিক্রমে রয়েছে মাদিয়ান, কান্তুরাহর গর্বে ইব্রাহিমের ( আ: ) পুত্র। মাদিয়ানের নামে তাঁর বংশধরদের দ্বারা যে শহরটি তৈরি হয়েছিল, তাঁর মধ্য হতেই হযরত শুয়াইব ( আ:) আসেন এবং তাদের মধ্যে ইসলাম প্রচার করেন বলে জানা যায়।

বংশ তালিকা[সম্পাদনা]

ইমাম তাবারীর (রঃ) মতে, তাঁর বংশ তালিকা হল- তিনি ইব্রাহিম, তাঁর পিতা তারেহ (তিনি আযর), তার পিতা নাহুর, তার পিতা সারুগ, তার পিতা আরগু, তার পিতা ফালেগ, তার পিতা আবির, তার পিতা শালেখ, তার পিতা কেনান, তার পিতা আরফাখশাদ, তার পিতা সাম, তার পিতা নূহ (আঃ)। [৭]

তবে ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) আহলে কিতাবদের বর্ণনা অবলম্বনে বংশ তালিকাটির বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন- ইব্রাহীম, তার পিতা তাসারুখ, তার পিতা নাহুর, তার পিতা সারুগ, তার পিতা রাঊ, তার পিতা ফালিগ, তার পিতা আবির, তার পিতা শালেহ, তার পিতা আরফাখশায, তার পিতা সাম, তার পিতা নূহ (আঃ)।[৮]

বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের[৯] বিপরীতে কুরআনে ইব্রাহীম (আঃ) এর পিতার নাম আযর বলা হয়েছে।[১০] ইব্রাহিম (আঃ) এর পিতার দুটি নাম ছিল। একটি আসল নাম, আরেকটি উপনাম। [১১] তবে ইবনে আব্বাস (রাঃ)সহ অনেক হাদিসবিশারদদের মতে আযর ছিল মুর্তির নাম, আর ইব্রাহিম (আঃ) এর পিতা সে মুর্তির পুজারী হিসেবে তাকেই আযর উপনামে ডাকা হতো। [১২] আবার কারো মতে, আযর ছিল আসল নাম। অপর নাম ছিল তারেহ। [১৩] সবাই তাকে তারেহ নামে চিনতো, কুরআন তার আসল নাম প্রকাশ করেছে।

আসমানী কিতাব[সম্পাদনা]

ইসলাম ধর্মমতে, ইব্রাহিম (আঃ) -এর উপর সহীফা অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-

❝কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে থাক, অথচ আখিরাতের জীবনই উত্তম ও অবিনশ্বর। নিশ্চয়ই এটা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে (বিদ্যমান) আছে। রয়েছে ইবরাহীম ও মূসার সহীফাসমূহে বা গ্রন্থসমূহে।❞

ওয়াছেলা ইবনে আসকা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেন,

"ইব্রাহিম (আঃ) এর সহীফাসমূহ অবতীর্ণ হয়েছিল রমজানের প্রথম রাতে।"

খৎনা করণ[সম্পাদনা]

কোন কোন ইসলামি পণ্ডিতে মতে, তিনিই প্রথম মিসওয়াক করেন, প্রস্রাব সেরে পানি দ্বারা পরিষ্কার হন। সর্বপ্রথম তাঁর মাথার চুল পেঁকে সাদা হয়েছিল।[১৪] তিনিই সর্বপ্রথম খৎনা করেন এবং তাঁর বংশধরদের তা করতে উৎসাহিত করেন।[১৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1.  কুরআন ৮৭:১৯
  2.  Siddiqui, Mona। "Ibrahim – the Muslim view of Abraham"। Religions। BBC। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  3.  ফক্বীহ আবুল লাইস সমরকন্দী। "নবী রাসুল প্রসঙ্গ"। বুস্তানুল আ'রেফীন (প্রিন্ট)। মাওলানা লিয়াকত আলী কর্তৃক অনূদিত (১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ সংস্করণ)। চকবাজার, ঢাকা: হামিদিয়া লাইব্রেরী লি:।
  4.  কুরআন। পৃষ্ঠা ২:১২৪।
  5.  কুরআন। পৃষ্ঠা ২:১২৮।
  6.  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; BA নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7.  তারিখে তাবারী-১/২৩৩, প্রকাশনা-দারুল মাআরেফ মিশর
  8.  আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-১/১৩৯, প্রকাশনা-মাকতাবাতুল মাআরেফ, বৈরুত।
  9.  বাইবেলঃ বুক অব জেনেসিস-১১:২৬-২৭,৩১
  10.  সূরা আনআমঃ৭৪
  11.  তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে জালালাইন
  12.  ইবনে আবী শায়বা (রঃ), আব্দুল্লাহ বিন হুমাইদ (রঃ), ইবনে জারীর তাবারী (রঃ), ইবনে মুনজির (রঃ) ও ইবনে আবী হাতিম (রঃ) উনারা সকলেই হযরত মুজাহিদ (রঃ) থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন, আযর হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর পিতা ছিলো না। বরং আযর ছিলো একটি মূর্তির নাম।" দেখুন- জালালুদ্দীন সূয়ুতি; আদ-দুররুল মানছুর-৩/২৩
  13.  মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, যাহহাক ও কালবীর মতে। -তাফসীরে বগভী, তাফসীরে কুরতুবী (সূরা আনআমের ৭৪নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
  14.  বায়হাক্বী;শুআবুল ঈমান-৬/২৮৯৩,মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা
  15.  মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস-২৬৪৬৭