পরকালের পথে যাত্রা | মৃত্যু
পরকালের পথে যাত্রা | মৃত্যু
মৃত্যু একজন মানুষের জীবনের মন্দ সমাপ্তির অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে, তার মধ্যে একটি হল গুনাহের কাজে অব্যাহত থাকা। একজন ব্যক্তি খুব ছোট কোন গুনাহ করতে পারে, কিন্তু আলিমগণ বলে থাকেন, ছোট গুনাহ অনবরত করতে থাকলে তা বড় গুনাহতে পরিণত হয়। অতএব যখন আপনি একটা ছোট গুনাহ বারে বারে করতে থাকবেন, এটাকে ধরা হবে গুরুতর গুনাহ হিসেবে। আল-যাহাবী তাঁর ‘আল-কাবাইর’ গ্রন্থে মানুষের জীবনের মন্দ সমাপ্তি সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তির নেশা ছিল দাবা খেলা, মৃত্যুর সময় যখন তাকে বলা হল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে, সে, তা বলতে পারল না। আর মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে সে বলতে থাকল, ‘চেক দোস্ত! চেক দোস্ত!’ — সে ভাবছিল তার দাবার কথা, আর এভাবেই সে মারা গেল। তিনি আরেক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন যাকে মৃত্যুর সময় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে বলা হলে সে বলতে থাকে, ‘আমাকে একটা বোতল দাও, একটা গ্লাস দাও, আমি মদ খাবো।’ যেহেতু সে ছিল মাদকাসক্ত, শেষ মুহূর্তে এসেও তার মাথায় মদের কথা ঘুরছিল। আর-রাবী বিন সাবুরা একটা ঘটনা বলেন, তিনি এক লোকের মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন, সে ছিল অ্যাকাউন্টেন্ট, তাকে সবসময় হিসাব-নিকাশ আর গণনার কাজ করতে হতো। মৃত্যুর সময় সবাই তাকে কালেমা পড়তে বললো, কিন্তু, সে বলতে শুরু করল, ‘১০, ১১, ১২…’ এরপর মৃত্যু পর্যন্ত সে এভাবেই নম্বর গুনতে থাকল। ইবন আল কায়্যিম একটা কাহিনী বর্ণনা করেন যেখানে এক ব্যক্তিকে মারা যাওয়ার সময় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে বলা হলে সে বলল, ‘আমি পারছি না’ অথচ তার জিহবায় কোনো প্রকার সমস্যা ছিল না। সে প্রাঞ্জলভাবে কথা বলতে পারত, কিন্তু সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে পারল না। আল্লাহ তা‘আলা তাকে এটা বলার তওফিক দিলেন না কেননা তার জীবনে এটা বলার মত কোনো রেকর্ড ছিল না। আমরা সবসময় ভাবছি এই করবো, সেই করবো, সারাজীবন গুনাহ করে যাবো আর মৃত্যুর ঠিক ৫ মিনিট আগে আমি বলব ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আর পার পেয়ে যাবো – না, এটা এতো সহজ না। আপনি যেসব কাজ করে অভ্যস্ত সেসব কাজ করতেই করতেই আপনার মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কখনোই ভাববেন না আপনি আল্লাহ কে বোকা বানাবেন। আপনার মনে আল্লাহর ভয় থাকা উচিত। যে ব্যক্তি আল্লাহর আযাব থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। সিরিজটি শুনতে ক্লিক করুন - http://bit.ly/2fur4G8
পরকালের পথে যাত্রা | মৃত্যু
রুহের যাত্রা ‘মৃত্যু তোমায় স্বাগতম! আমি তোমার জন্য কতোদিন ধরে অপেক্ষা করে আছি, আমাকে দেওয়া আল্লাহর ওয়াদার জন্য অপেক্ষা করে আছি। মৃত্যু তোমায় স্বাগতম! হে মৃত্যু, মনে কোরো না, আমি এই দুনিয়াতে ভালোবাসার টানে থাকতে চেয়েছি, না, আমি এখানে থাকতে চেয়েছি যেন দীর্ঘ গরমের দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারি, যেন শীতের দীর্ঘ রাত্রিগুলো সালাত পড়ে কাটাতে পারি। এখন আমার যাওয়ার সময় এসেছে, আমি তোমাকে স্বাগত জানাই। নাও আমার আত্মাকে।’ — মুয়ায বিন জাবাল, জীবনের অন্তিম মুহুর্তে।
কিয়ামতের ছোট লক্ষণ ০৮-১৮ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, শান্তির প্রসার ঘটবে, আবার এও আছে যে ফিতনার প্রসার ঘটবে। এবং এ দু’টো একই হাদীসে বলা আছে, অতঃএব এগুলো অবশ্যই ভিন্ন সময়ে ঘটবে। যখনই ইসলাম থাকবে, তখন শান্তি বজায় থাকবে। আর যখন মানুষের উপরে ধর্মের প্রভাব কমে যাবে, দীন মানার প্রবণতা কমে যাবে, তখন দুর্নীতি ও ফিতনা বৃদ্ধি পাবে, হত্যা বৃদ্ধি পাবে। রাসূলুল্লাহ সা. এর কিছু হাদীসে এই শান্তি প্রসার সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। যেমন তাদের একটি হলো, রাসূলুল্লাহ সা. কাবায় হেলান দিয়ে বসেছিলেন। খাব্বাব রা. রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে আসলেন এবং মক্কায়, ইসলামের প্রাথমিক বছর গুলোতে সাহাবারা যে কঠিন সময়ের মোকাবেলা করছেন সে ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে ফরিয়াদ জানালেন, ‘আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করবেন না ?’ রাসূলুল্লাহ সা. সোজা হয়ে বসলেন এবং তার চেহারাতে স্পষ্টত রাগ দেখা যাচ্ছিলো। রাসূলুল্লাহ সা. এর তখন বললেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তীদের মাঝে কিছু লোককে ধরে আনা হতো, জমিতে গর্ত খোঁড়া হতো, সেখানে ঢুকাবার পর একটি করাত আনা হতো, তাদেরকে সেই করাত দিয়ে দু’টুকরা করা হতো, তবু তারা তাদের দ্বীন ছাড়তো না। তারপর তারা আরেকজন মুসলিম কে ধরে নিয়ে আসত এবং লোহার চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতে থাকত, যতক্ষণ না তাদের হাড় থেকে মাংস আলাদা হয়ে যেত। কিন্তু তারপরেও সে তার দ্বীন ছাড়তো না। কিন্তু তোমরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছো।’ যদিও খাব্বাব ও অন্যান্য সাহাবারা রা. বিভিন্ন প্রকার অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তার পরেও রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন ‘তোমাদের ধৈর্য ধরতে হবে, ব্যতিব্যস্ত হয়ো না, আল্লাহ প্রদত্ত বিজয় আসবেই।